নামকরণের ক্ষেত্রে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবার কারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই জানত। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর। অপর একটি প্রচলিত ধারণা থেকে জানা যায় যে রংপুর জেলার পূর্বনাম রঙ্গপুর।
প্রাগ জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের রঙ্গমহল এর নামকরণ থেকে এই রঙ্গপুর নামটি আসে। রংপুর জেলার অপর নাম জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউ এই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদুর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাটি ছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, পুর অর্থ নগর বা শহর। গ্রাম থেকে আগত মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে নিহত হত বা ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণ মানুষ শহরে আসতে ভয় পেত। সুদুর অতীতে রংপুর জেলা যে রণভূমি ছিল তা সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। ত্রিশের দশকের শেষ ভাগে এ জেলায় কৃষক আন্দোলন যে ভাবে বিকাশ লাভ করে ছিল তার কারণে রংপুরকে লাল রংপুর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
রংপৃর জেলা ২৫৹০৩˝থেকে ২৯৹৩২˝ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত । মোট আয়তন ২৩০৮ বর্গ কিমি । আটটি উপজেলা, ইউনিয়ন ৭৬টি, ১৪৫৫টি মৌজা এবং ৩টি পৌরসভা নিয়ে রংপুর জেলা গঠিত।রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাট ও তিস্তা নদী, দক্ষিণে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা, পূর্বে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট এবং পশ্চিমে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা অবস্থিত। তিস্তা নদী উত্তর ও উত্তর পূর্ব সীমান্তকে লালমনির হাট এবং কুড়িগ্রাম জেলা থেকে আলাদা করেছে।
রংপুর জেলাকে বৃহত্তর বঙ্গপ্লাবন ভূমির অংশ মনে করা হয়। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে এর গঠন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আলাদা। এ জেলার ভূগঠন অতীতে উত্তরাঞ্চল প্রবাহমান কয়কটি নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং ভূকম্পনজনিত ভুমি উত্তোলনের সাথে জড়িত। তিস্তা নদীর আদি গতিপথ পরিবর্তন ছিল রংপুর জেলার ভূমি গঠনের ক্ষেত্রে অতিগুরুত্বপূর্ণ। তিস্তানদী ১৭৮৭ সালের পূর্বে গঙ্গানদীর একটি উপনদী ছিল। তিস্তা সিকিম বা হিমালয়ে পরিচিত রাংগু ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর জেলার নিকট আত্রাই এর সাথে মিলিত হয়ে নিম্ন গঙ্গা নদীতে পতিত হতো। ১৮শ শতকে তিস্তা, আত্রাই নদীর পথ ধরে গঙ্গা ও বিছিন্ন কিছু খাল বিলের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র, উভয় কিছু নদীর সাথে ঋতু ভিত্তিক সংযোগ করত। অপর নদী ধরলা তিস্তা থেকে নিম্ম হিমালয় অঞ্চল বৃহত্তর রংপুর জেলার পূর্ব দিক দিয়ে (বর্তমান কুড়িগ্রাম) ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। ঘাঘট জেলার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ । ঘাঘট তিস্তার গর্ভ থেকে উৎপন্ন হয়ে রংপুর জেলার মধ্য দিয়ে দক্ষিনে গাইবান্ধা জেলা অতিক্রম করে করতোয়া নদীতে পতিত হয়। আত্রাই নদী এ সময় করতোয়া ও গঙ্গার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করত।
রংপুর জেলা আটটি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে-
রংপুর সদর উপজেলা
বদরগঞ্জ উপজেলা
গঙ্গাচড়া উপজেলা
কাউনিয়া উপজেলা
মিঠাপুকুর উপজেলা
পীরগাছা উপজেলা
পীরগঞ্জ উপজেলা এবং
তারাগঞ্জ উপজেলা
রংপুর অঞ্চলকে তামাকের জন্য বিখ্যাত বলা হয়। এখানে উৎপাদিত তামাক দিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটানো হয়। রংপুরে প্রচুর পরিমান ধান-পাট-আলু উৎপাদিত হয়। যা স্থানীয় বাজার তথা সারাদেশের বাজারে সমান হারে সমাদৃত।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান
রংপুর জেলার কেল্লাবন্দ নামক স্থানে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে যেমনঃ আর,এফ,এল লিঃ, মিল্ক ভিটা বাংলাদেশ, বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজ। এছাড়া হারাগাছ নামক স্থানে বিড়ি(সিগারেট) তৈরীর একাধিক কারখানা। রংপুর শহরের আলম নগর নামক স্থানে আছে আর, কে ফ্যান কারখানা। বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর নামক স্থানে গড়ে উঠেছেঃ শ্যামপুর চিনিকল লিমিটেড, রংপুর ডিষ্টিলারিজ এন্ড কেমিক্যাল কোঃ লিঃ।
চিত্তাকর্ষক স্থান
কারমাইকেল কলেজ,
তাজহাট রাজবাড়ী,
ভিন্নজগত,
রংপুর চিড়িয়াখানা,
পায়রাবন্দর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে রংপুর জেলা প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশের একটি অন্যতম জেলা। এখানে গড়ে উঠেছে অনেক সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অন্যতম হলঃ
রংপুর জিলা স্কুল
রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
রংপুর ক্যাডেট কলেজ
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর
পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ, রংপুর
কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজ, রংপুর
রংপুর সরকারী কলেজ
বেগম রোকেয়া সরকারী মহিলা কলেজ, রংপুর
কারমাইকেল কলেজ, রংপুর
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস