রংপুর জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণঃ
এ্যাকনা মাইনসের দুই কন্যা ব্যাটা আছিল। তার ছোটোকোনা উয়ার বাপকে কইল,বা,মোর পইসা কড়ির ভাগ মোক দেও। ওই কতাতে তাঁয় উমার ঘরক সব বাটি দিল।
অথবা
একদিন চেংটু আসি দেওয়ানীক কইল বাহে, দেওয়ানীর ব্যাটা হটো তো অমপুর যাই। হামার এ্যাকনা মোকদ্দমা আছে। দেওয়ানী কইল মুই আইজ যাবার পাবার নও হামার বাড়িত আইজ সাগাই আসপে।
রংপুরের কিছু আঞ্চলিক শব্দঃ
আঞ্চলিক শব্দ |
প্রকৃত শব্দ |
অকে |
উহাকে |
অমপুর/অংপুর |
রংপুর |
অক্ত |
রক্ত |
আঙা |
রাঙ |
আেচা ভূয়া |
অদ্ভুত |
আন্দন |
রান্ধন |
আইগন্যা |
উঠোন |
ইতি |
এদিকে |
ইয়াতে |
ওদিকে |
ওতি |
ওদিকে |
উটি |
রুটি |
উন্দাও |
ন্যাংটা |
উশশানো |
চোয়ানো |
এইংকা |
এরকম |
এইকনা |
এতটুকু |
এ্যামতোন |
এমন |
ওড়েযাওয়া |
শেষ হওয়া |
ক্যাংকা |
কেমন |
কইনা |
কনে |
কশটিয়া |
কৃপণ |
কাদা |
মাটির গামলা |
কাপাট |
দরজা |
কৈতর |
কবুতর |
ক্যানে |
কেন |
খাংকা |
ঠৈকখানা |
গুদাম |
বোতাম |
চ্যাংড়া/চ্যাংড়ি |
ছেলে/মেয়ে |
ছাওয়া |
সন্তান |
গুয়া |
সুপারি |
জারা ধরা |
মরিচা ধরা |
টেটিয়া |
হিংসুটে |
প্যান্টি(হালুয়া পান্টি) |
গরু মহিষ তাড়ানো বাঁশের লাঠি,পাচন বাড়ি |
পোয়াতি ভাত |
সেহেরী |
ভোকরা পাটা |
বড় পাঠা |
পাটা |
পাট |
ফ্যাদলা |
বেশি কথা বলা |
ফল/ডিমা/আন্ডা (অঞ্চল ভেদে) |
ডিম |
বাইগন |
বেগুন |
বাহে |
বাবাহে,বাপুহে |
মুশরী |
মশারী |
শোশা |
শশা |
দুড়া |
কচ্ছপ |
মংগা |
অভাব/অধিক দুব্যমূল্য |
দলান |
দালান |
গাবরু |
বর |
তাংকু |
তামাক |
হামাক |
আমাকে |
পশ্যন |
পরিবেশ |
ঢ্যানা |
যে যুবকের বিয়ে হয়নি |
বাড়ুন |
ঝাটা |
(যখন আলোয়ার দোপাতা
তখন ঢ্যানার বিয়ার কতা)
ষোড়শ শতকের রংপুর অঞ্চলের একজন কবির কাবোর উদ্বৃতি- যেখানে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহত হয়েছেঃ
শুন পিতা কহি আমি তোমারো মোক্ষত
মনে মোর এহি সাদ কহিল তোমাত।
দিব্য এক সহানো চাইয়া মন্দির নিম্মাইব।
চাইর দিকে চাইর মন্দির মদ্ধে তো দলান
চাইর রাজকন্যাকে রাখিব আনিয়া
মন্ধেতো দলান ঘর বসিতা।
চাইর কন্যার র‰রস দেখিব নএ আনে।
(মুহমমদ কালাঃ নিজাম পাগলার কেচ্ছা)
রংপুরের ভাষাতে বাক্য মধ্যে বিশেষ জোর বোঝাতে গিয়ে অনাবশ্যকভাবে "হ এ' একটি পদ ব্যবহার করা হয়।
যেমন-
আজি কালির মইধ্যে যদিনা আইল হএ।
য় বোসে য়ভাগিনীর মরণ নিছ এ।
জলে রম্প দিআ নহে য়নলে পশিয়া।
নহে প্রাণ তাজিলায় হএ গরল ভক্ষিআ।
(ষোড়শ শতকের কাব্য নিজাম পাগলার কেচ্ছা)
রংপুরের ভাষায় ক্রিয়ার ব্যবহারঃ
রংপুর অঞ্চলে ব্যবহত |
প্রকৃত ক্রিয়া |
দিখিম/যাইম |
দেখিব,দেখব,যাইব,যাব |
যায়া |
যেয়ে |
খায়া |
খেয়ে |
করিম |
করিম/করবো |
বলিম |
বলিব/বলব |
দিয়া |
দিয়ে |
এ অঞ্চলের শব্দরুপঃ
একবচন বহুবচন
আমি-হামি-মুই আমরা-হামরা
আমাকে-আমাক,হামাক- মোক আমাদের-হামার ঘরক-হামাকগুলাক
ওরা- ওমরা ওমরা-ওমার ঘরে,ওমাকগুলাক
তোমার-তোর তোমাদের-তোমার ঘরক/তোমার গুলাক
ওর/ওমার/উমার ওদের/ওমার ঘরে,উমার গুলাক
রংপুর অঞ্চলের কিছু ছড়া/প্রবাদ/প্রবচনঃ
1. নটকো বাড়ি দিয়া সটকো পাটা বাড়ি দিয়া গিঁড়িত।
2. প্যালকা দশমনে পশু্যক।
3. যার বাড়ত বিয়া তাঁয় পায় না গুয়া।
4. র‰রসে র‰পুর ফাকসা পাড়া দিনাজপুর।
5. বাপে বেটায় খায় তামাকু, জামাই বলে দেন তো বাপু,জাইত মারলে মোর সাদের তামাকু।
6. পাচাত নাই ত্যানা,ভাসুরে বাজাযই ব্যানা।
7. শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি,তিন দিন বাদ ঝাটার বাড়ি।
8. গুডু গুডু হাফ মুই তোর বাপ।
9. যদি বইষ্যে পুষে ,কড়ি হয় তুষে।
10.যদি বইষ্যে আগনে,রাজা যায়-মাগনে।
11. চাদর আওলা ফুরুত ফারুত,গজি আওলা কোঁতে,খ্যাতা আওলা ফুকুর ফুকুর হাসে।
রংপুর অঞ্চলে, বিশেষত গ্রাম অঞ্চলে মানুষের নামকরণের সংস্কারধর্মী প্রবণতা দেখা যায় যেমন-কাইটা, টন্না,চিকা, শিয়ালু ,টাগরা, ঘাউয়া, কাউয়া,ফুরকুনী, ফকরানী, কুড়ানী ইত্যাদি।
রংপুরের গ্রাম অঞ্চলে কিছু নিজসব খেলা প্রচলিত ছিল সেগুলোর মধ্যে কপাটি (কাবাডি) চ্যাংগুডান্ডা ইত্যাদি।
আজকের ক্রিকেটের মত চ্যাংগুডান্ডার একটি আদল ছিল। এই খেলায় ডান্ডা দিয়ে চ্যাংগু মারার পরে মাপ করা হতো এভাবে এ্যাড়ি,দড়ি,খ্যাড়বাড়ি,চাম্পা চাউল,চ্যারাগ,লাংকা - এগুলোর একেবারেই আঞ্চলিক শব্দ।
মেয়েলী খেলাধুলার মাধ্যমে রংপুরী ভাষায় ছড়া কাটার প্রচুর নির্দশন আছে।
যেমন -
ইকরি বিকরি চাম চিকরি
চামের আগায় দিনু পটি
আয় গোয়ালী ভাত খাই
না খাও তোর হাতে গবরি গবরি গোন্ধায়
এ্যাল পাত,ব্যাল পাত
ছিড়ি ন্যাংটি তোল এক হাত
রংপুরের মেয়েলী গীতের মধ্যে অজস্র রংপুরের ভাষার ব্যবহার আছে। যেমনঃ বিয়ের সময় বর বা কনেকে হলুদ মাখানো হয়। এ সময়ে গীতঃ
মলমল গোন্দাও
মুখ খানা দেখ তোর নাটুয়াও
অথবা
ফোরল ডুববার গেনু মা মুই
কুমোর পাড়া দিয়া
ব্যারাও রই কুমারের মাইয়া
হাতত দিয়ার নিয়া।
রংপুরের ভাওয়াইয়া ও পলীগীতি বিশবদরবারে নন্দিত। এক্ষেত্রে ভাওয়াইয়া সম্রাট আববাস উদ্দীনের সীমাহীন প্রয়াসে এই স‰xত লাভ করেছে অসামানী মর্যাদা ও বিপুল জনপ্রিয়তা। আর এই জনপ্রিয় জননন্দিত স‰xত এর শরীর রংপুরী ভাষার অলংকারে ঝলমল। এরুপ জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া ও পলী গীতির উদাহরণঃ
1) ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে
2) ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর রে।
3) আহারে কুংকুরার সুতা হলু নোহার গুনারে
4) কানিচাত নাগানু আকাশি আকালি আকালি ঝুমঝুম করে।
তথ্য সংগৃহিত- রংপুর সংবর্তিকা (মুহমমদ আলীম উদ্দীন)
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস