রংপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাহিত্যকর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি সুপ্রাচীন ও বিভাসিত। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন এই রংপুর। বলা যায় প্রকৃতির রহস্যময়তায় নান্দনিক সৌন্দর্যে প্রকৃতির আদরণীয় হিল্লোলে ও প্রাণময়তায় ভরপুর রংপুর। অর্থাৎ
‘‘রঙ্গঁরসে ভরপুর
এই রঙ্গঁপুর’’।
(রংপুর জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ)
এই রঙ্গঁরস শিক্ষা-সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য বিশেষ করে লোকসংস্কৃতি মিলিয়ে অনবদ্য। রঙ্গঁপুরের পরিবর্তিত রূপ রংপুর।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম অংশের নাম বরেন্দ্র বা রারেন্দ্রী। রংপুর (রঙ্গঁপুর) সমতল বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত। পরবর্তী সময়ে যে অঞ্চল গৌড় অঞ্চল বলে পরিচিতি লাভ করে।
প্রাচীন ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করলে দেখা যায়, রংপুর (রঙ্গঁপুর) এর ভূমি সম্প্রসারিত ছিল গৌহাটি কেন্দ্রিক রাজ্য প্রাগজ্যোতিষপুরের অন্তর্গত।
রংপুরের রঙ্গঁপুর নামটির নামকরণ এখনও চুড়ান্তভাবে বিতর্করহিত হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন মহাভারতের সময়ে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা ভগদত্তের রংমহল ছিল রংপুরের এবং সেই রংমহল হতে নাম হয়েছে রঙ্গঁপুর। কারো কারো মতে ভগদত্তের কন্যা পায়রাবতীর নামানুসারে নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মভুমি পায়রাবন্দের নামকরণ হয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন রংপুরের বস্ত্ররঞ্জনী কারখানা (Dying Industry) ছিল। পাট নির্মিত বস্ত্রে বা চটে রং করা হতো বলে রংপুরকে রংরেজপুর বলা হতো এবং তার পরিবর্তনে হয়েছে রঙ্গঁপুর (রংপুর)।
তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন রংপুরের নামকরণের ক্ষেত্রে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর অবদান গ্রহণযোগ্য। রঙ্গঁপুর শব্দটির ফার্সী শব্দ আর তাই সঙ্গত কারণে বখতিয়ার শাসন আমলে রংপুরের নাম রঙ্গঁপুর হয়েছে।
রংপুর কালেক্টর ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৭৯৩ খ্রিঃ রংপুর কালেক্টর হতে বিচার বিভাগ আলাদা হলে একজন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়।
তিস্তা, ধরলা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, আখিরা, বিধৌত রংপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং প্রাচীনত্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভাষাঃ মানুষের আবেগ, অনুভূতি, অভিব্যক্তি, চিন্তা, চেতনা সবকিছু প্রকাশের বাহন। তাইতো বলা হয়েছে ‘‘মানুষের কণ্ঠোচ্চারিত অর্থযুক্ত ধ্বনি সমস্টিই ভাষা’’। আর এ ভাষা পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদের ভিন্ন ভিন্ন। যেমন বাঙালি জাতির ভাষা বাংলা। এই বাংলা ভাষা ভারতীয় কথ্য ভাষার প্রাচীন প্রাকৃত (খৃ.পূ.৫০০) হতে গৌড়ীয় প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে বাংলার জন্ম হয়েছে।
বাংলা ভাষার যেমন আছে পরিশীলিত রূপ তেমনি অঞ্চল ভিত্তিক গ্রামীণ জনপদে প্রচলিত রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা।
ভৌগোলিক কারণে হোক বা শারীরিক গঠনের জন্য হোক রংপুরের শিক্ষিতজনেরা বাংলাদেশের অনেক জেলার অপেক্ষা পরিশীলিত ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাদের উচ্চারণে কোন বিকৃতি নেই, নেই অস্পষ্টতা। তারা অনায়াসে আঞ্চলিকতা সম্পন্ন ভাষা বা উচ্চারণ পরিহার করতে পারেন।
ম্যাকসমূলার বলেছেন ‘‘The real and natural life of language is in its dialects’’. ভাষার প্রকৃত ও স্বাভাবিক জীবন তার উপভাষাগুলিতে। উল্লেখ্য বাংলাভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। রংপুরেও পরিশীলিত ও মার্জিত ভাষার সমান্তরাল রংপুরের প্রামাঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে।
আঞ্চলিক ভাষা, যখন এ গ্রামাঞ্চলের জনপদে উদ্ভব হয়েছে নিঃসন্দেহে সে সময় হতে গ্রামীণ জনপদ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে আসছে। এ ভাষার উচ্চারণগত সহজবোধ্যতা, সাবলীলতা ও শ্রুতিমাধুর্য অসামান্য। আর এ আঞ্চলিক ভাষায় রচিত হয়েছে সাহিত্য-সঙ্গীত, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, গীত ইত্যাদি যা মানুষের আনন্দের উপকরণ। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সমৃদ্ধ সাহিত্যকর্মের মাত্র কটির নাম করা হলো, ষোড়শ শতকের কবি মুহম্মদ কালার নেজাম পাগলার কেচ্ছা , অষ্টাদশ শতকের কবি হেয়াত মামুদের রচনায় রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার অনেক শব্দ রয়েছে ।বেগম রোকেয়ার রচনায় রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার শব্দাবলীও আছে । পরবর্তী সময়ে নাট্যকার তুলসী লাহিড়ীর ছেঁড়াতার, সৈয়দ শামসুল হক এর নুরলদীনের সারাজীবন, নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদেরহামার অমপুর, আবুলকাশেমের হামার দ্যাশ হারাগাছ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মরা মানুষের মিছিল,আনিসুল হক এর নাল পিরান, মকসুদুল হক এর শঙ্খামারীর ঘাট, সাখাওয়াত হোসেনের বাহে নিধূয়া পাথার, নাসিমুজ্জমান পান্নার নাকফুল এবং মতিউর রহমান বসনীয়া রংপুরের ভাষার অভিধান ও অনেক কবিতা লিখেছেন এ ভাষায় । তাছাড়াও অনেকে রংপুরের ভাষা ব্যবহার করেছেন রচনায় এবং মুহষমদ আলীম উদ্দিন তাঁর রংপুর সংবর্তিকা গ্রন্থে রংপুরের ভাষা শিরোনামে প্রবন্ধ রচনা করেছেন ।
রংপুরের ভাষা উদীচ্য বা বরেন্দ্র উপভাষার গোত্রভূক্ত ।
এ ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
1)আনুনাসিক বর্ণ রক্ষিত,
2)শ্বাসাঘাতের নির্দিষ্ট সহান নেই,
3)শব্দের আদিকে ‘ র ’ এর আগয় লোপ,
যথাঃ রস= অস, রামবাবু= আমবাবু, রংপুর= অমপুর, রক্ত = অক্ত,
‘‘ আমবাবুর রামবাগানে অনেক রাম পেকেছে’’।
4)অধিকরণ কারকে‘‘ ত ’’ বিভক্তির প্রয়োগ ।
‘‘ বাবা বাড়িত নাই’’।
5)অপিনিহিতর ব্যবহারঃ অদ্য>অহিজ, কাল্য>কাইল
6)শব্দের মধ্যবর্তী ব্যঞ্জনবর্ণ লোপ ঃ কহিল>কইল,
7)‘‘ ছ’’ এর ব্যবহার ‘ চ ’ রূপেঃ মাছ>মাচ
8)শব্দের মধ্যবর্তী সহানে অতিরিক্ত স্বরবর্ণের ব্যবহারযেমনঃ গেলে>গেইলে, বোন>বইন,
9)‘ল’ এর সহলে ‘ন’ এর আগম ঃ লাট>নাট, লাগে>নাগে
কতিপয় শব্দঃ
অকে, অমপুর, অক্ত, আঙা, আন্দন, উদিনকা, আইগন্যা, ক্যাংকা, ফ্যাদলা, এইংকা, উন্দাও, বাইগন, বাহে, সুন্দরী, তাংকু, দলান, ঢ্যানা, বাড়ুন, গাবরু, কাপাট, কইনা, এইকনা, ছাওয়া ইত্যাদি ।
রংপুরের সাহিত্যকর্মঃ
অনেক বাংলা সাহিত্যের গবেষক ওঐতিহাসিক বলেছেন যে বাংলা সাহিত্যের আদিনীড় রংপুর । রংপুরের ভাষার যেমন প্রাচীনত্ব আছে তেমনি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনত্বে্র রংপুরের অংশীদারিত্ব আছে । বাংলা ভাষা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ অর্থাৎ প্রাচীন বাংলায় রচিত ৫১টি পদ অখন্ডিত ৪৭ পদই বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন, রচয়িতা ২৪ জন কবি । ডঃ মুহষমদ শহীদুল্লাহর মতে যা রচিত হয়েছে ৭ম শতাব্দী হতে ১০ শতাব্দীর মধ্যে । আর এই পান্ডলিপিটি ১৯০৭ সালে আবিস্কৃত হয়েছে নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগার হতে । আবিস্কারক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ।
অনেকে মনে করেন চর্যাপদের কবিদের অনেকের পদচারনা হয়তো ঘটেছিল রংপুরে । ফলে চর্যাপদের ভাষা’. অনেক রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার শব্দও বিশেষতবদেখতে পাওয়া যায় যেমন. টলিত মোর ঘর/নাহি পরবেসী হাড়িত ভাত নাই নিতি আবেসী
‘তে’ বিভক্তির স্থলে ‘ত’ বিভক্তির প্রয়োগ রংপুরের ভাষার বৈশিষ্ট্য। তেমনি নঞক অব্যয়ের ব্যবহার ব্যবহার ক্রিয়াপদের আগে, যেমন, গাছের তেস্তুল কুম্ভীরে নক্ষত্র, রংপুরের উদাহরণ।
না যাও, না খাও।
শব্দ মোর, তোর, সুতি, পোহাই, ঘিন, খাল, ইত্যাদি শব্দ রংপুরেও ব্যবহৃত হয়।
রংপুর হতে স্যার জর্জ গ্রীয়ার্সন আবিষ্কার করেছেন নাথ গীতিকা, মধ্যযুগের অনেক বিশিষ্ট্য কবি কাব্য রচনা করেছেন রংপুরে। তাঁরা হলেন কমললোচন, হরিশচন্দ্র বসু, হেয়াত মামুদ, শাকের খাদম, মুহম্মদ কালা, দ্বিজহরি, ধুরহানুল্লাহ, শরিয়তুল্লাহ।
আধুনিক যুগের অনেক কবি সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন আর তারা হলেন, পন্ডিত যাদবেশ্বর, তর্করত্ন, জামাল উদ্দিন, রামনারায়ণ তর্করত্ন যিনি বাংলা মৌলিক নাটক ‘কুলিনকুল সর্বস্ব’ রচনা করেন এবং কুন্ডির জমিদার প্রদত্ত ৫০/- টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হরগোপাল রায়, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, অতুল গুপ্ত, অতুল প্রসাদ সেন, শেখ ফজলুল করিম, খেরাজ আলী, রবীন্দ্র নাথ মৈত্র, তুলসী লাহিড়ী, নুরুল ইসলাম কাব্য বিনোদ, সৈয়দ শামসুল হক, আশুতোষ দত্ত, মোতাহার হোসেন সুফী, মতিউর রহমান বসনীয়া, মহফিল হক, মোনাজাত উদ্দীন, মুহম্মদ আলীম উদ্দীন, মঞ্জু সরকার, আনিসুল হক, আব্দুল হাই সিকদার, সৈকত আসগার সহ আরো অনেক সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে অবদান রেখেছেন এবং এখনও অনেকে সাহিত্যকর্মে সচল আছেন।
লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি: (রংপুর জেলার আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ)
লোক সাহিত্য ও লোক সংস্কৃতিতে রংপুরের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আর এসব কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়েছে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়। আঞ্চলিকতার দিক দিয়ে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালীর বিপরীত প্রান্তের লোকসঙ্গীত। ভাওয়াইয়া রংপুরের লোকসঙ্গীত ধারায় সর্বাপেক্ষা উজ্জবল ও সমৃদ্ধ শাখা। ভাওয়াইয়া সম্রাট আববাস উদ্দীন ১৯৫৪ সালে ভাওয়াইয়াকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপিত করেন। ভাওয়াইয়া লোকসঙ্গীতের ধারায় এই অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন পেশার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-বেদনাকে আশ্রয় করে লোকের মুখে মুখে রচিত এবং বিপুল আবেদনময় সুরে বাঁশি ও দোতরার মতো বাদ্যযন্ত্র যোগে গীত হয়ে আসছে।
আঞ্চলিক নামানুসারে ভাওয়াইয়া ৫টি ধারায় বিভক্ত, ‘ভাব’ ‘ভাওয়া’, ‘বাওয়া’, ‘বাউদিয়া’ প্রভৃতি শব্দ হতে ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি বলে গবেষকরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্যযোগ্য জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া-
1.ওকি গাড়িয়াল ভাই
2.কি ও কাজল ভোমরা
3.তোরসা নদীর ধারে ধারে
4.নাইওর ছাড়িয়া যেও মোর বন্ধু
5.নদী না যাই ওরে বৈদ
6.ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে।
রংপুরের মেয়েলী গীত/বিয়ের গীতঃ
রংপুরের লোক সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের ধারায় মেয়েলী গীত- বিয়ের গীত একটি উল্লেখযোগ্য । রংপুরের মেয়েলী গীত মেয়েলী আচার অনুষ্ঠানের অনেক বিষয় নিয়ে রচিত ও গীত। যেমন বিয়ে, সাধভক্ষন, অন্নপ্রাসন, নবজাতকের ক্ষৌ্র কাজসহ বিয়ের বিভিন্ন পর্বকে ঘিরে এই গীতগুলো রচিত এবং নৃত্যযোগে আনন্দমুখরতার মধ্যদিয়ে গীত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
রংপুরের লোক সঙ্গীতের ধারায় আরো আছে হুদমার গান, জগেরগান, যোগীর গান, গোয়ালীর গান, ক্ষ্যাপাগান, জারীগান, মালশা গান, পালাগান, বা কাহিনীগান লোকসঙ্গীত রংপুরের উল্লেখযোগ্য সঙ্গীত ধারা। এ ধারায় রয়েছে অসংখ্য পালাগান। যেমন, নসিমন সুন্দরীর পালা, গুনাইবিবি, অমমূলা কন্যা, নেকোবিবি, কলিরাজা, চিনুবিনু, আরো অনেক।
রংপুরের লোকসঙ্গীতের ধারায় আছে, রংপুরের ভাষায় ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা (শিল্কা) এই সঙ্গে আছে লোক বিশ্বাস রংপুরের কারু শিল্প-চারুশিল্প প্রশংসিত অবস্থায় ছিল, আর এগুলো হলোঃ শতরঞ্চি, পাটশিল্প, রেশম, তাঁত, মৃতশিল্প, নকশীকাথা, বাঁশশিল্প, কাঠশিল্প, কাসা-পিতল, লোহা শিল্প, ঢেঁকি শিল্প ইত্যাদি।
রংপুরের শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
রংপুরের দূর অতীতের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। তবে ১৮২৩ সালের কানুনগোর প্রতিবেদন থেকেজানা যায় যে, ১৮২৩ সালে রংপুরে ১৯টি পুলিশ সার্কিটের ১৪টিতে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না, অবশিষ্ট পাঁচটিতে ১০টি বাংলা এবং ২টি ফারসি স্কুল ছিল। তবে ৯টি সার্কিটে টোল ছিল যার প্রতিটি টোলে ৫ জন করে ছাত্র অধ্যয়ন করতে পারত।
রংপুর জেলায় ১৮৩২ সালে সর্বপ্রথম জমিদারদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জমিন্দার্স স্কুল’ যা ১৮৬২ সালে সরকারিকরণ করা হলে নাম হয় রংপুর জিলা স্কুল। ১৮৬০ সালে তুষভান্ডার হাইস্কুল, ১৮৬৪ সালে উলিপুর স্বর্ণময়ী ইংরেজি হাইস্কুল, ১৮৯০ সালে তাজহাট হাইস্কুল, মাহিগঞ্জে, ১৮৮৫ সালে ডিমলা মডেল স্কুল, ১৯১৩ সালে কৈলাশরঞ্জন এবং ১৯১৬ সালে রংপুর গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
উচ্চশিক্ষার জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না তবে অনেক প্রয়াসের পর ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কারমাইকেল কলেজ, নামকরণ হয় গভর্ণর লর্ড ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল এর নামে। প্রায় নয়শত বিঘা জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত।
বর্তমান রংপুর শহরেই কারমাইকেল কলেজ (১৯৬৩ সালে সরকারিকরণ করা হয়) ছাড়াও মেয়েদেরজন্য বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ ও রংপুর সরকারি কলেজ রয়েছে।তাছাড়াও রয়েছে একটি মেডিকেল কলেজসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, পলিট্যাকনিক ইনস্টিটিউট। এগুলো ছাড়াও ক্যান্ট পাবলিক ও পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ ও কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজ সহ অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
রংপুরে অনেক প্রত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাওলানা কেরামত আলী মসজিদ, লালবাগ মসজিদ, রংপুর টাউন হল, কারমাইকেল কলেজ ভবন,টেপা জমিদারের বাড়ি, রংপুর পৌরসভা ভবন,তাজহাট জমিদার বাড়ি । ১৮৫৪ সালে ও ১৯০৫ যথাক্রমে পাবলিক লাইব্রেরী, রংপুর সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় যা পরিচালিত হয় বর্তমান শহীদ মিনার চত্তবরে নির্মিত ভবনে- এগুলো এখনো রয়েছে ।
ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সাহিত্য সংস্কৃতির ময়মূখ খচিত আলোয় উদ্ভাসিত রংপুরের আরো অনেক বিষয় যা উপসহাপিত হওয়ার গৌরব সংরক্ষণ করে কিন্তু স্বল্প পরিসরে অনেক কথা, সব কথা বলা যায়নি । তবে পরিবেশিত তথ্য সম্ভারের মধ্যে দিয়েও রংপুরের প্রাচীনত্বউপলব্ধ হবে ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস